কাচ ভাঙার শব্দের পাশপাশি এবার হঠাৎ বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুরু হয়েছে শুভ’র মাঝে। কখনো টিপ টিপ আবার কখনো ঝুম বৃষ্টি। এ শব্দটি ভীষণ ভালো লাগে ওর। এক দুঃষহ কষ্টের শব্দের মাঝে হঠাৎ ভাল লাগার এই অদ্ভ’ত শব্দের নেপথ্যে যে উদয় হলো, শুভ নিজেই তা আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে।
’সুলক্ষ্মী’। হালকা শারীরিক গঠনের একটা মেয়ে। গায়ের রংয়ে যেনো জোছনার আলো ছড়ানো। কথায় এবং মননে যাদুর অসাধারণ ছোঁয়া রয়েছে তার। ওর চোখ দু’টি যেনো পৃথিবীর সব ভাষায় কথা বলে। তার হাসিতে হ্নদয়ে ঝড় বয়ে যায়। সে এক সর্বনাশা মধুর ঝড়। এই মেয়েটির কথা মনে পড়লেই শুভ’র ভেতরে টিপ টিপ বৃষ্টি...আর তার চোখে চোখ পড়লেই ঝুম বৃষ্টির শব্দ শুরু হয়। তখন মনে হয়, শুভ বৃষ্টিস্নাত এক অন্য মানুষ। বৃষ্টির এই শব্দটি সে আমৃত্যু ধরে রাখতে চায়। কিন্তু কোথায় যেনো একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরী হয় এতে। কাঁচের দেয়াল। শেষ পর্যন্ত আর সাহস হয় না সুলক্ষ্মীর সামনে এই কথা নিয়ে দাঁড়াতে। অথচ শুভ’র গভীর বিশ্বাস- সুলক্ষ্মীর দুয়ারে গিয়ে দাঁড়ালে তাকে শূণ্য হাতে ফিরিয়ে দিবে না। প্রকৃতির অমীয় সৃষ্টি বৃষ্টি পড়ার শব্দ শোনা থেকে তাকে বঞ্চিত করবে না। তবুও ভয়। আর এই ভয় থেকেই যেনো সুলক্ষীর প্রতি আরো গভীরতার ভূ-স্বর্গ খনন হচ্ছে প্রতিদিন।
কাচ ভাঙার অসহ্য শব্দের মাঝে ভাল লাগার বৃষ্টির শব্দ-এটা নিশ্চয় প্রকৃতির সারপ্রাইজ। প্রকৃতি ধৈর্য্যশীলকে কখনো‘ই নিরাশ করে না। হয়তো এই সত্যটি প্রমাণের জন্যে’ই শুভ’র মেঘলা আকাশে নতুন সূর্যোদয়। সূর্যের এ আলোয় সে তেজদীপ্ত হবে নাকি পুড়ে অঙ্গার হবে- ভেবে পায় না। তবে এতে তেজদীপ্ত হলেও বৃষ্টির শব্দ-পুড়লেও বৃষ্টির শব্দ শুনতে পায় সে। শংকা হয়-অতি বর্ষণে আবার প্লাবন ঘটে যায় যদি কিংবা ভয়ংকর ঢেউয়ের গর্জন! বিষয়টি নিয়ে সাইকিয়াষ্ট অধ্যাপক মোশাররফ সাহেবের সাথে কথা বলা জরুরী।
রাত বারটার কাঁটা অতিক্রম করে চলেছে। শুভ দরজায় কড়া নাড়তে যাবে,ঠিক এ সময় তার চোখ পড়লো একটি চিরকুটের দিকে - দরজায় কসটেপ দিয়ে আটকানো চিরকুটে লাল কালি দিয়ে লেখা-
“রাত বারটার পর কেয়ামত ঘটে গেলেও
আমাকে ডাক দেওয়া নিষেধ”
-অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন
কঠিন এই নিষেধাজ্ঞার কারনে কড়া নাড়তে সাহস পেল না শুভ। দরজার পাশে টিকটিকির মতো দাঁড়িয়ে রইলো সে।
রেলগাড়ী চলার ঝিক ঝিক একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে ...। মোমবাতির আলো টিনের বেড়ার একটা ফুটো দিয়ে বাইরে আসছে। মোশাররফ সাহেব নিশ্চয় সজাগ। কি করছেন তিনি ? হয়তো জরুরী কোনো গুরুত্বপূর্র্ন কাজে ব্যস্ত । তো রেলগাড়ীর শব্দ আসছে কেন ? আশে পাশে কোথাও কোনো রেল ষ্টেশন নেই। এখান থেকে রেল ষ্টেশনের দূরত্ব প্রয় চৌদ্দ/পনের কিলোমিটার হবে। এতো দূর থেকে শব্দ আসার কথা নয়। শব্দটা আসছে এই ঘরের ভেতর থেকেই। শুভ’র ইচ্ছে করছে ফুটোটা দিয়ে ভেতরে তাকাতে। কিন্তু এটা সম্পূর্ন অনাধিকার চর্চার পর্যায়ে পড়ে যায়। তবুও ভীষণ কৌতুহল হচ্ছে তার। অবশেষে নিয়মনীতি ভঙ্গ করে শুভ ফুটোতে চোখ রাখলো।
রেল গাড়ী চলার ঝিক ঝিক শব্দের রহস্য দেখে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে ওর। বেশ কষ্ট করে অবরোধ করতে হচ্ছে তাকে।
দেশের বিশিষ্ট স্্াইকিয়াষ্ট অধ্যাপক মোশাররফ সাহেব আশি বছরের এই বৃদ্ধ বিছানায় বসে একটা খেলনা গাড়ি চালাচ্ছেন। প্লাষ্টিকের তৈরী দু’ফুট জায়গায় সীমাবদ্ধ গোলাকার রেল লাইনের মধ্যে ব্যাটারি চালিত রেলগাড়ী চলছে। বিষয়টি দারুণ উপভোগ করছেন তিনি। হঠাৎ রেলগাড়ি থেমে যায়। ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেছে।
ট্রেন থেমে যাওয়ায় মোশাররফ সাহেবের মনটা বেশ খারাপ হয়ে পড়েছে। তিনি দেয়াল ঘড়ি থেকে ব্যাটারি খুলে এনে রেলগড়িতে লাগালেন। রেল গাড়ি আবার চলতে শুরু করেছে - ঝিক ঝিক...
আনন্দে অধ্যাপক মোশাররফ সাহেবের চোখ-মুখ অবুঝ শিশুর মতো রূপ ধারণ করলো। শুভ মোশাররফ সাহেবের এই কান্ড দেখে অবাক হয়ে ভিন্ন এক আনন্দ উপভোগ করছে। কিছুক্ষণ পর আবারো ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যায়। থেমে যায় রেল গাড়ি। মোশাররফ সাহেব খাটে হেলান দিয়ে আধশোয়ার মতো করে রইলেন। তিনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন বন্ধ দেয়াল ঘড়িটার দিকে।
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ভীষণ ধরে গেছে শুভ’র। ও পা টেনে টেনে বারান্দার সম্মূখে গিয়ে দাঁড়ায়। ঘড়িতে রাত বারটা বেজে বিয়াল্লিশ মিনিট। কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেল সে। এতো রাতে অচেনা-অজানা এই জায়গায় বাইরে কিভাবে যে একা কাটাবে,ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎ এলাকাটি আলোকিত হয়ে উঠলো। জোছনার আলোয় পথ-ঘাট গড়াই নদীর জল সব ঝলছে উঠলো। নদীর জলগুলো রূপার মতো চক চক করছে। শুভ নদীর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। স্বচ্ছ জলে আকাশটাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
জলে ভেসে উঠেছে সপ্তর্ষী পূর্নিমার চাঁদ খন্ড খন্ড কিছু সাদা-কালো মেঘ। অদ্ভূত সুন্দর লাগছে এখন রাতের পরিবেশ। শুভ ঘাসের উপর আরাম করে বসলো। ব্যাগ থেকে বেনসনের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ঠোঁটে রাখলো। দেয়াশলাই না থাকায় সিগারেটটি ধরানো যাচ্ছে না। মোশাররফ সাহেবের ঘরে এখনো মোমবাতি জ্বলছে। ইচ্ছে করলে ওখান থেকে সিগারেটটিতে আগুন ধরিয়ে আনা যায়। না,তা সম্ভব নয়। কেয়ামত ঘটে গেলেও উনার দরজায় কড়া নাড়া যাবে না।
শুভ আগুনবিহীন সিগারেটেই টান দিতে লাগলো। নিকোটিনের গন্ধ আসছে কিছু কিছু। মন্ধ লাগছে না ধোঁয়াবিহীন নিকোটিন পান । সে উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে আছে জলে। কিছুক্ষন পর জলে ভেসে উঠলো নদী। সাথে সাথে শুভ’র ভেতরে শুরু হলো কাঁচ ভাঙার শব্দ- ঝন ঝন ....... ও উঠে দাঁড়াতে চায়লে নদী কথা বলে উঠলো-
ঃ শুভ, তুমি উঠবে না। বসো, তোমার সাথে কথা বলি। কেমন আছো তুমি ?
শুভ নিরুত্তর। সে ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে নদীর দিকে।
ঃ তুমি আমায় চিনতে পারোনি শুভ...
ঃ চিনবো না কেন ? তুমিতো দেখতে সেই আগের মতোই আছো।
ঃ তাহলে আমাকে দেখে চলে যেতে চায়লে যে ..
শুভ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো, তোমার কথা মনে পড়লেই আমার ভেতরে কাঁচ ভাঙার শব্দ হয়- আমি সইতে পারি না।
ঃ বেশতো , আমায় ভুলে যাও।
ঃ ভুলে যাবো ?
ঃ হ্যাঁ, ভুলে যাবে। যে স্মৃতি মানুষকে কষ্ট দেয় , তা ভুলে যাওয়ায় ভালো।
ঃ তুমি পেরেছো ?
ঃ না, পারিনি। তবে তা সহ্য করে নিয়েছি। শুভ জানো, পৃথিবীটা অনেক বড়। তুমি অযথা আমার কথা মনে রেখে শুধু শুধু’ই কষ্ট লালন করছো। ’তুমি’ আর ’আমি’ এই বলয় থেকে আমাদের সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাস্তার পাশের ঐ উলঙ্গ শিশুটি, বস্তিতে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃতে্যুর পথযাত্রী ঐ বৃদ্ধকেও আপন ভাবতে হবে।
একটা শুকনো ডাল আম গাছ থেকে ভেঙে পড়লো জলে। জলে গোলাকার একটা ক্ষুদ্র ঢেউয়ে কেঁপে কেঁপে অদৃশ্য হয়ে যায় নদী। কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়ে পড়ে জল। এবার শান্ত জলে ভেসে উঠে সুলক্ষ্মীর প্রতিচ্ছবি। সাথে সাথে শুভ’র ভেতর শুরু হলো টিপ টিপ টাপুর টুপুর বৃষ্টি..। ওর চোখে যখন তার চোখ পড়লো অমনি ঝুম বৃষ্টির শব্দ.। শুভ কোনো কথা বলছে না। কথা বলছে না সুলক্ষ্মীও। শুভ ভাবছে-আচ্ছা, সুলক্ষ্মীর ভেতরেও কি তার মতো এমন প্রশান্তির বৃষ্টিপাত হয়..? অন্তত: ছিটে ফোটা দু’একটি...জিজ্ঞাসা করা যাক। না, থাক।
শুভ ক্ষীণ কন্ঠে বললো,কেমন আছো সুলক্ষ্মী ?
সুলক্ষ্মী নিরুত্তর। ঠোঁটে তার অদ্ভুত হাসি।
শুভ একাই বলতে লাগলো- জানো সুলক্ষ্মী, এতোদিন কাঁচ ভাঙার কি যে এক অসহ্য শব্দে অতীষ্ট ছিলাম আমি! তুমি’ই আমার মাঝে বৃষ্টি পড়ার রিমঝিম শব্দের সৃষ্টি করলে। তোমার সাথে আমার দেখাটা আরো আগেই হলো না কেন ? অনেক আগে!
কথাগুলো শুনে সুলক্ষ্মী আরো অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগলো। যদিও হাসির কোনো শব্দ নেই, তবুও একটা শব্দ শুভ’র বুকে বর্ষার মতো বিদ্ধ করছে। ওর ইচ্ছে করছে জল ছুঁয়ে দেখতে। মেয়েটি তার অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবনের সব কিছুই নাড়িয়ে দিয়েছে। তার কেবলি মনে হচ্ছে- সে সুলক্ষ্মীর মতো’ই একজনের অপেক্ষা করছিলো।
জলে এখন সুলক্ষ্মী শব্দ করে হাসছে। শুভ জল ছুঁতে ঘাটের দিকে এগিয়ে যাবে- এ সময় পেছন থেকে একজন তার কাঁধে হাত রাখলো। কিছুটা কেঁপে উঠে শুভ। পেছনে তাকিয়ে দেখে, অধ্যাপক মোশাররফ সাহেব।
ঃ স্যার,আস্আলামুআলাইকুম।
ঃ অলাইকুমআস্সালাম। তুমিতো এসেছো সেই কখন। তো আমায় ডাকলে না কেন ?
ঃ না, মানে এমনি স্যার।
ঃ এমনি বলছো কেন-চিরকুটে নিষেধাজ্ঞা দেখে তুমি আমায় ডাকোনি।
ঃ জ্বি স্যার। আচ্ছা স্যার, এমন কঠিন কথাটি লিখেছেন কেন ?
ঃ তোমার জন্য।
ঃ আ মা র জন্য ?
ঃ হ্যাঁ তোমার জন্য। আমার ধারণা ছিলো-তুমি আবার আমার কাছে আসবে। আসবে’ই। আর এ জন্যে’ই একটা ফাঁদ পেতে রেখে ছিলাম। যেনো তোমার আগমনের খবরটি আমি তোমাকে না দেখেই কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনে বুঝতে পারি।
ঃ এক্রকিউজ মি স্যার,আমিতো দিনের বেলা কিংবা রাত বারটার আগেও এখানে আসতে পারতাম।
ঃ হ্যাঁ, তা পারতে। তবে আমার কেন যেন মনে হয়েছিলো- তুমি আমার কাছে রাতেই আসবে এবং মধ্যরাতে। যাক সে কথা। কাঁচ ভাঙার শব্দের পাশাপাশি ইদানীং তোমার ভেতর যে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুরু হয়েছে, এতে আমি দারুন খুশী হয়েছি।
ঃ বৃষ্টি পড়ার শব্দও আপনি শুনেছেন স্যার !!
ঃ প্রথমে টিপ টিপ অত:পর ঝুম বৃষ্টি।
ঃ কি বলছেন স্যার !
ঃ খুব অবাক হচ্ছো,তাই না ?
ঃ জ্বি স্যার। এ কি করে সম্ভব ?
ঃ এসো ওখানটায় বসি। শোনো, আকাশে না তাকিয়েও তুমি এতোক্ষণ নদীর জলে পূর্ণিমার চাঁদকে দেখেছো। কাঁচওয়ালী - বৃষ্টিওয়ালীকে দেখেছো, তাদের সাথে কথা বলেছো। এটা যদি সম্ভব হয়-তাহলে আমার বিষয়টিও অসম্ভব কিছু নয়। আসলে মানুষের অসাধ্য বলতে কিছু নেই। বিজ্ঞানী নীল আর্মষ্ট্রং’এর মা-বাবাও বিশ্বাস করতেন যে, চাঁদে জিন পরী ও ভ’ত বসবাস করে। কিন্তু আর্মষ্ট্রং চাঁদে গিয়ে তার মা-বাবা এমনকি পৃথিবীর সবাইকে সেই বিশ্বাসের দেয়াল ভেঙে দিলেন। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, চাঁদে ভ’ত নয় ; বরং সেখানে মানুষ বসবাস করবে অচিরেই। মঙ্গলেও এই চিন্তা ভাবনা চলছে। তবে মানুষের মন জয় করা বড় কঠিন - চাঁদ এবং মঙ্গল আরোহনের চেয়েও। যাক তুমি কারো মন জয় করতে পারো আর না পারো- নিরবে একটা প্রশান্তির শব্দতো শুনতে পারছো। প্রথমে টিপ টিপ অত:পর ঝুম বৃষ্টি..। বৃষ্টিওয়ালীর নাম কি ? আষাঢ় না শ্রাবন ?
ঃ সুলক্ষ্মী।
ঃ বাহ্ ভিন্ন ঋতু!
ঃ স্যার, আমি এই বৃষ্টির শব্দটা ধরে রাখতে চাই।
ঃ বেশতো রাখবে। বৃষ্টির পানিতো আর্সেনিক মুক্ত।
ঃ কিন্তু কিভাবে যে তা ধরে রাখবো বুঝতে পারছি না। আমি কি করতে পারি স্যার ?
ঃ তুমি কি করবে আমি কি বলবো ? ধরো, সাপের কারনে তুমি কোনো রাস্তায় হাঁটতে ভয় পাচ্ছো-এ জন্যে তুমি আমার কাছে এলে একটা পরামর্শের জন্য। আমি তোমাকে কার্বোলিক এসিড নিয়ে ঐ রাস্তায় চলতে বললাম। তুমি তাই করলে। সাপ থেকে হয়তো রক্ষা পেলে, কিন্তু সেই রাস্তায় যদি অন্য কোনো জন্তু থাকে ? কাজেই বুঝতে পারছো তোমাকেই চিন্তা করতে হবে তুমি কি করবে। এ শক্তি পৃথিবীর সব মানুষকেই দেওয়া হয়েছে।
শুভ’র আঙ্গুলের ফাঁকে সিগরেটটা এখনো রয়েছে। দীর্ঘক্ষণ আঙ্গুলে থাকায় তা নেতিয়ে পড়েছে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মোশাররফ সাহেব বললেন, মিঃ শুভ সিগারেট হবে একটা ?
শুভ লজ্জিত ভাবে বললো, জ্বি হবে স্যার। কিন্তু আগুন নেই স্যার।
ঃ দাও দেখি একটা। তোমার মতো আমিও নিকোটিনের গন্ধ পান করি।
শুভ সিগরেটের প্যাকেট এগিয়ে দিলো। মেশাররফ সাহেব নিজে একটা নিলেন আরেকটি শুভকে দিলেন। দু’জনে আগুনবিহীন সিগারেট আয়েশ করে টানতে লাগলো।
পাখি ডাকতে শুরু করেছে। ভোর হতে আর বেশী সময় বাকী নেই। মোশাররফ সাহেব লক্ষ্য করলেন, আবারো বৃষ্টি পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। শুভ গভীর ভাবে চেয়ে আছে নদীর জলে। তিনি আরো লক্ষ্য করলেন, শুভ’র ভেতরে কাঁচ ভাঙার শব্দ আর হয়নি এ পর্যন্ত। তবে কি এ শব্দটা থেমে গেছে ? থেমে যাওয়াই ভালো। বেচারা অন্যদের মতো নিরবে ধ্বংস হতে চায় না। সে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে চায়। ঈশ্বরও মনে হয় তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চান। আর এ জন্যে’ই তার ভেতরে বৃষ্টি পড়ার শব্দ সৃষ্টি করে দিয়েছেন তিনি। ধরাজ গলায় শুভ বললো,এইতো এই মাত্র বৃষ্টির শব্দ হলো - শুনেছেন স্যার ?
মোশাররফ সাহেব শুভ’র কাঁধে দ্বিতীয়বার হাত রেখে বললেন, শুনেছি। মিঃ শুভ,এ নিয়ে তুমি কখনো দুঃচিন্তা করো না। আমার ধারণা, প্রকৃতি তোমাকে পছন্দ করেছে। তুমি সুলক্ষীর বিষয়টি প্রকৃতির হাতে ছেড়ে দাও। যা করার প্রকৃতি’ই করুক। আমাদের জীবনতো আর অনন্ত কালের জন্য নয় যে, কষ্ট এলে তা অনাদীকাল বহন করতে হবে। জীবের মৃত্যু যেহেতু অবধারিত- তো অবশেষে না হয় মৃত্যু’ই সব সমস্যার সমাধান করে দিবে। এসো, আমরা সবাই মৃত্যুকে ভয় নয় ; ভালোবাসতে শিখি। মানুষের জীবনে মৃত্যু’ই সবচেয়ে সুন্দর!
ভোরের মিষ্টি হাওয়া পাখির ডাক আর বৃষ্টি পড়ার অদৃশ্য রিম ঝিম শব্দে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে’ই সূর্যোদয় হচ্ছে। সূর্যের তাজা আলোর স্পর্ষ নিতে গড়াই নদীর তীরে বসে আছে শুভ। পাশে রয়েছেন দেশের বিশিষ্ট সাইকিয়াষ্ট অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন। তিনি তৃতীয় বারের মতো শুভ’র কাঁধে হাত রেখে বললেন, তোমার লেখা কবিতা শোনাও।
শুভ তার লেখা কবিতা পড়া শুরু করলো-
সুলক্ষ্মী,
আমার বৃষ্টি পড়ার শব্দ
ফুসুফুসের অক্রিজেন
বুকের ধক ধক
মস্তিস্কের ঘূণ পোকা
ভোরের মিষ্টি হাওয়া
অলস দুপুরের সংগীত
বিকেলের মধুর হাসি
গোধূলীর অদ্ভুত রং
সন্ধ্যার সপ্তর্ষী
জোসনার রূপালী আলো
রাতের রেড ওয়াইন
অদৃশ্য ফুলের গন্ধ
কেমন আছো তুমি ?
তুমি ভালো থেকো
খুব ভালো ।
০৬ এপ্রিল - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৩৭ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৮৩
বিচারক স্কোরঃ ২.৪৩ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ২.৪ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪